জুলাই আন্দোলনে অর্থ দাতা ও জুলাই বিপ্লবের ছাত্র জনতার হত্যাকারী ও হত্যা মামলার আসামি
খোকন কে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জুলাই বিপ্লবের এক বছর পার। যেখানে দেশের ছাত্রজনতা ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগানে বুকের রক্ত ঢেলে স্বপ্ন দেখছে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার, সেই স্বপ্নের পথরোধ করে আনোয়ারার হাইলধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারে বহাল তবিয়তে বসে আছে সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের অন্যতম মুখ— প্যানেল চেয়ারম্যান ইলিয়াস মাহমুদ খোকন।
স্থানীয় সরকার শাখার ১৫ জুলাইয়ের অফিস আদেশে আনোয়ারা উপজেলার ১০নং হাইলধর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ হিসেবে খোকনকে আর্থিক ও প্রশাসনিক সকল ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।
জেল ফেরত খোকন, বিতর্কিত নিয়োগ
খোকন গ্রেফতারের পর হাইলধর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-এর দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে আরেকজন নির্বাচিত ইউপি সদস্যকে দেওয়া হয়। তিনি নিয়মিতভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং ইউনিয়নের ১২ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে ৭ জন সরাসরি তাকে সমর্থন করছেন।
এ অবস্থায় খোকন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিপুল অর্থের বিনিময়ে আবারও প্যানেল চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অথচ দায়িত্বে থাকা বৈধ প্যানেল চেয়ারম্যানকে এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত অব্যাহতি দেওয়া হয়নি— যা স্থানীয় সরকারের নিয়মবিধিকে স্পষ্টভাবেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
বিতর্কিত সেই চিঠি হাতে নিয়েই ১৭ জুলাই খোকন সন্ত্রাসী গ্যাংসহ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে জোরপূর্বক ঢোকার চেষ্টা করলে সাধারণ মানুষ ও ছাত্রজনতা একজোট হয়ে খোকন ও তার অনুসারীদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়।
আসামিকে কিভাবে নতুন করে দায়িত্ব?
স্থানীয়দের ক্ষোভ, “যিনি এখনো দায়িত্বে আছেন, তাকে না সরিয়ে একজন হত্যা ও হামলার আসামিকে কীভাবে নতুন করে দায়িত্বের চিঠি দেওয়া হয়?” হাইলধরবাসীর কাছে খোকনের নাম মানেই আতঙ্ক, হামলা, মামলা আর ছাত্রজনতার রক্তে রঞ্জিত এক দুঃস্বপ্নের ইতিহাস।
ছাত্রজনতার রক্তের দায়ে মোড়ানো গদি
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের উপর অস্ত্রসহ হামলার ঘটনায় সরাসরি অভিযুক্ত এই খোকন।
সূত্র মতে, ১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলা নং-০২ (ধারা ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৪ পেনাল কোড) অনুযায়ী, ৪ আগস্ট ২০২৪ নিউ মার্কেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্রজনতার উপর দেশীয় অস্ত্রসহ খোকন ও তার সহযোগীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে। এতে বাদী মোঃ শামীম (২৪) সারা শরীরে গুলিবিদ্ধ হন— এখনও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই মৃত্যুর সাক্ষী গুলির স্প্লিন্টার।
পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও সদরঘাটের দুই দিক থেকে একদল মুজিববাদী সন্ত্রাসী খোকনের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার উপর হামলা চালায়। চারদিক থেকে ঘিরে গুলি, লাঠি-সোটা, ইট-পাথরের আঘাতে অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়।
গ্রেফতার হলেও ‘ছাতার’ নিচে মুক্তি
মামলার তদন্তে উঠে আসে, ইলিয়াস মাহমুদ খোকন ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টা, বেআইনী সমাবেশ ও সশস্ত্র হামলার প্রমাণ মিললেও রহস্যজনকভাবে পুলিশি হেফাজত থেকে মুক্তি পান তিনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে ফিরিঙ্গীবাজারের জলসা মার্কেট থেকে গ্রেফতার করেছিল। তদন্তে উঠে আসে, হামলার মূল পরিকল্পনা ও মাঠপর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন খোকন নিজেই। এমনকি আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তার রিমান্ডের আবেদনও করা হয়— যাতে বলা হয়েছিল, “তাকে জেল হাজতে আটক রাখা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অপরিহার্য।”
‘মুজিব কোট’ থেকে ‘জিয়া’র কবর— ছদ্মবেশের রাজনীতি
খোকনের রাজনৈতিক রূপান্তরের গল্প হাইলধরবাসীর কাছে নতুন নয়। এক সময় মুজিব কোট গায়ে চাপিয়ে আওয়ামী লীগের ব্যানারে পদ-পদবী বাগিয়েছেন, আবার একই ব্যক্তি জুলাই বিপ্লবের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে রাতারাতি হয়ে যান ‘বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী’।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার এপিএস সায়েমের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত এই খোকন, এলাকায় রোহিঙ্গা ভোটার বানানো, সরকারি খাসজমি দখল, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং দিয়ে হামলা-মামলার রাজত্ব গড়ে কোটিপতি বনে গেছেন বলে জনশ্রুতি।
আদালতের রায় অমান্য, নতুন ঘর ভাঙা কাহিনী
গত ২৬ জুন ভোরে হাইলধরের এক গ্রামে আদালতের আদেশ অমান্য করে খোকনের নেতৃত্বে এক স্থানীয়ের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়— এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়লেও রহস্যজনক কারণে তেমন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা হয়নি।
অভিযোগের পাহাড়, তবু ব্যবস্থা শূন্য!
খোকনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ— ছাত্রজনতার উপর অস্ত্রসহ হামলা, রোহিঙ্গা ভোটার বানানো, সরকারি খাসজমি দখল, চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, কিশোর গ্যাং গড়ে এলাকায় ভয়ভীতি ও দখল রাজত্ব।
তবুও জেলা প্রশাসকের অফিস আদেশে খোকন প্যানেল চেয়ারম্যান-১ হয়ে পুরো ইউনিয়নের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করেছেন— যা সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।
ছাত্রজনতা ও হাইলধরবাসীর আর্তি— অবিলম্বে অপসারণ ও শাস্তি:
এক বছর আগে রক্তে লেখা হয়েছিল নতুন ভোরের গল্প— কিন্তু সেই স্বপ্নের বুকে ছুরি চালিয়ে খোকনের মতো ‘ছদ্মবেশী’ নেতারা যদি আবারও ক্ষমতার চেয়ার দখল করে বসে থাকে, তাহলে হাইলধর আর নিরাপদ থাকবে না— বলছেন স্থানীয়রা।
তাদের শেষ দাবি— “আইন সবার জন্য সমান প্রমাণ করতে হবে। রক্তের দায় নিয়ে কেউ চেয়ারম্যানের গদি দখল করতে পারে না। খোকনকে অপসারণ করতে হবে। রোহিঙ্গা ভোটার বানানো, দখল, অর্থ পাচার ও হামলা-মামলার সব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে— না হলে নতুন খোকনরা বারবার জন্মাবে!”
ছাত্রজনতার রক্ত যেন অপমানিত না হয়:
দেশের নীতিনির্ধারক, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি হাইলধরবাসীর শেষ আহ্বান— “ছাত্রদের রক্ত যেন আর রাজনৈতিক ছদ্মবেশীদের পায়ে পদদলিত না হয়। প্রশাসনকে প্রমাণ করতে হবে— খোকনদের জন্যও আইন সমান।”
ট্র্যাভেল এজেন্সির পিওন থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক আওয়ামী লীগের দোসর খোকন মেম্বার।
আজ থেকে ১৫ বছর আগে পেটের ক্ষুধা মেটাটে চট্টগ্রামের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির পিওন হিসাব কাজ শুরু করেন খোকন। তার বাবা নোয়াখালীর বাসিন্দা, তার বাবার একাধিক স্ত্রী থাকায়, বাবার সাথে ঝগরা করে কাজের সন্ধানে বের হয়ে চট্টগ্রাম এসে ট্র্যাভেল এজেন্সিতে পিওনের কাছ শুরু করেন। মোটা অংকের টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বানিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১৫ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় করেছে খোকন।
নিজে ও এখন একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক। ফ্যাসিস সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রীর একই এলাকার লোক হওয়ার সুবাদে ভূমি মন্ত্রীর এপিএস সায়েমের আস্তাভাজন হয়ে উঠে এবং তার অবৈধ লেনদেনের ক্যাসিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পায়।
ভূমি মন্ত্রীর এপিএস সায়েমের আর্শীবাদে মেম্বার, টাকার জোরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ ও ভাগিয়ে নিয়েছে।
জুলাই আন্দোলনে অর্থ দাতা ও জুলাই বিপ্লবের ছাত্র জনতার হত্যাকারী ও হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে গেলে তার প্যানেল চেয়ারম্যান পদ চলে যায়।
দীর্ঘ ৪ মাস কারাবাসের পর গত ১৫ই জুলাই আবারো প্যানেল চেয়ারম্যান এর পদ ভাগিয়ে নেয়।
এবং এলাকায় দাপটের সাথে বলে বেড়াচ্ছে ডিসিকে ২ কোটি দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান এর পদ কিনে নিয়েছি।
এলাকায় সচেতন মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে জুলাই আন্দোলনে অর্থ দাতা ও জুলাই বিপ্লবের ছাত্র জনতার হত্যাকারী ও হত্যা মামলার আসামি হয়ে ও কিভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান পদ পাই এই নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। এলাকাবাসী জানান যে কোন মুহুর্তে ডিসি অফিস ঘেরাও করবে এলাকাবাসী।
এসব বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান ইলিয়াস মাহমুদ খোকন বলেন, আমি প্রকৃত পক্ষে বিএনপি করতাম। আওয়ামী লীগ আমলে আমি ডরে ভয়ে আওয়ামী লীগে ছিলাম। সায়েম আমার নির্বাচনের সময় আমার বিরোধিতা করেছিল।বর্তমানে আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে কিছু ব্যাক্তি আমার বিরুদ্ধে নেমেছে।