মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবসার ছদ্মবেশে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবির ফাঁদে কোটি টাকার ডিজিটাল প্রতারক চক্রের এক সদস্য গ্রেফতার ও প্রতারণার কাজে সংশ্লিষ্ট আলামতসহ উদ্ধার করা হয় ।
চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা ৯ জুলাই নরসিংদী জেলার ঘোড়াদিয়া এলাকায় এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এ সফলতা পান।
বর্তমান সময়ে আলোচিত এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ছদ্মবেশে অনলাইনে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করা। দীর্ঘদিন যাবত একটি সংঘবদ্ধচক্র অনলাইনে সাধারণ মানুষের WhatsApp হ্যাক করে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে কৌশলে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সংক্রান্তে বিশেষ করে মসজিদে বা অফিসে এয়ার-কন্ডিশনার (এসি) লাগবে, উন্নয়নমূলক কাজ করবে, অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তা করবে, এমন অজুহাতে প্রতারক চক্র মানুষের কাছ থেকে টাকা চেয়ে থাকে। অনেকেই সরল বিশ্বাসে প্রতারক চক্রকে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়।
বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের নজরে আসলে জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজে এ সংক্রান্তে কেউ যেন প্রতারিত নয় সেজন্য সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে কতিপয় ভুক্তভোগী আমাদের কাছে ওই প্রতারক চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ দাখিল করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখা তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে এই প্রতারক চক্রকে দ্রুততার সাথে শনাক্ত করে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জেলা গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে ৯ জুলাই নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন ঘোড়াদিয়া নামক স্থান থেকে প্রতারণার কাজে জড়িত শরীফুল ইসলাম, পিতা-শাখাওয়াত হোসেন, মাতা-মমতাজ বেগম, সাং-ঘোড়াদিয়া, থানা ও জেলা-নরসিংদী-কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকালে তল্লাশী করে তার নিজ বাসা থেকে নগদ ৪ লক্ষ টাকা, পাসপোর্ট, নকল ট্রেড লাইসেন্স, সীল, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন অপারেটরের সীম, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও জমা বই, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ, বিভিন্ন ব্যাক্তিদের এনআইডির কপি এবং অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
তার নিকট থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইলের হোয়াটসএ্যাপ কথোপকথন ও অন্যান্য ডকুমেন্টস্ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতারক চক্রের সহযোগিতায় তিনি এবং তার ভাই দীর্ঘদিন যাবত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবসার আড়ালে হুন্ডির ব্যবসা, অনলাইন জুয়া ও প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বিকাশ/নগদ/রকেট/উপায়সহ বিভিন্ন Mobile Apps এবং বিভিন্ন ব্যংকের মাধ্যমে অবৈধভাবে লেনদেন করে আসছিল।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত তার বড় ভাই আরিফুর রহমান ও তার বন্ধুসহ তাদের পরিবারের কিছু সদস্য মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব থেকে প্রতারণাপূর্বক অন্য ব্যক্তিদের সহায়তায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের WhatsApp একাউন্ট কৌশলে হ্যাক করে নিজেদের পরিচিতদের নামে নিবন্ধিত সিম ও বিকাশ/নগদ/রকেট হিসাব খুলে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেন। অপরদিকে তারা ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংকে নামে বেনামে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব খুলে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করে আসছে।