১৯৯১ সাল থেকে সাপ্তাহিক পূর্ব বাংলা পত্রিকার সম্পাদক জনাব জাফর হায়াতের সাথে আমার পরিচয়। তখনও সাংবাদিকতা পেশায় আমি আসেনি। ছাত্র জীবন থেকে সংবাদপত্র, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি আমার সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল প্রবল।
আমার দৃষ্টিতে জাফর হায়াত সাহেব ছিলেন খুব বুদ্ধিমান, কৌশলী, বিচক্ষণ ও সচেতন ব্যাক্তি । ওই সময় তিনি দৈনিক ইস্টার্ণ নিউজ পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। মাঝে মাঝে পূর্ব বাংলা পত্রিকায় আমার নিউজ ছাপা হতো। সংবাদপত্রে যোগ দেবার পর তার সাথে আমার দিন দিন সম্পর্ক বাড়তে থাকে। সাপ্তাহিক চট্টগ্রাম মঞ্চে ‘আমি ঠান্ডা মিয়ার গরম কথা’ নামে একটি কলাম লিখতাম তিনি ওই কলামের ভক্ত ছিলেন। তার পত্রিকায়ও এই কলামটি দিতে আমাকে বার বার অনুরোধ করত। পাঠকেরা বিভ্রান্ত হতে পারে মনে করে আমি চট্টগ্রাম মঞ্চে নিয়মিত ওই কলামটি প্রকাশ করতাম। বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের পাঠক সংখ্যা পূর্ব বাংলার চেয়ে তখন বহুগুন বেশী।
ওই সময় সম্ভবত ২০০৭ সালের দিকে পূর্ব বাংলা পত্রিকাটি প্রকাশক জাফর হায়াত আমাকে নিজ খরচে সম্পাদনা ও পরিচালনা করতে অনুরোধ করে। আমি পত্রিকা ছাপানো ব্যয়বহুল ও অসাধ্য মনে করে অনুরােধ রক্ষা করতে পারিনি।
২০০৮ সালে আমার মধ্যস্ততায় তাজুল ইসলাম চৌধুরী পিতা মরহুম হাজী নুরুজ্জামান,সন্দইপ্যাপাড়া,পূর্বছদাহ ইউনিয়ন ছদাহ, এ কবির মার্কেট ২য় তলা কেরানী হাট উপজেলা সাতকানিয়া জেলা চট্টগ্রাম কে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে কতিপয় শর্তে পূর্ব বাংলা পত্রিকাটি সম্পাদক পরিচয়ে ছাপানোর জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। আমাকে (এম. আলী হোসেন) প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে জাফর হায়াতের নাম সম্পাদকীয় কলামে চুক্তির শর্ত মতে অলংকার্থে ছাপানো হত। এই সাথে আমি নিউজ ও কলাম দেবার কারণে এবং জাফর হায়াত সাহেবকে প্রকাশক হিসাবে দুইজনকে সম্মানী দেবার চুক্তির শর্ত ছিল। ওই সময় আমার অফিসই (৭, এইচ এস এস রোড কোতোয়ালীর মোড়, চট্টগ্রাম ) সাপ্তাহিক পূর্ব বাংলা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ওই চুক্তি নামায় আমি ১নং স্বাক্ষীও ।এখনো পূর্ব বাংলা পত্রিকার অফিস এখানেই রয়েছে।
বছর তিনেক চালানোর পর পত্রিকার মান ক্ষুন্ন ও শর্ত পুরনের বরখেলাপ করায় তাজুল ইসলামের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করে প্রকাশক জাফর হায়াত। এরপর আমাকে পত্রিকাটি চালানোর জন্য অনুরোধ করে ।তখন তিনি আমাকে পত্রিকাটি চুক্তিতে চালানোর জন্য আমার নামে স্ট্যাম্প ক্রয় করে। পূর্বের চুক্তিমতে অথার্ৎ তাজুল ইসলামের ন্যায় আমি মাসে মাসে টাকা দিয়ে ভাড়াটিয়ার মতো পত্রিকা চালানো আমার নীতিতে বাঁধে বলে তাকে জানাই । তখন আর আমার সাথে চুক্তি করা হয়নি। ওই খালি স্ট্যাম্প তার কাছে রয়ে যায়।
এরপর মাহফুজুন্নবী খোকন সভাপতি সাতকানিয়া প্রেসক্লাবের সাথে জনাব জাফর হায়াত পূর্ব বাংলা পত্রিকা ছাপানোর জন্য আরো একটি চুক্তি করে।
কয়েক বছর পত্রিকা প্রকাশের পর চুক্তি লংঘনের দায়ে ওই চুক্তিটিও জাফর হায়াত বাতিল করে দেয়। বাতিলকৃত চুক্তি কার্যকর হবার পর তিনি অন্য কাউকে আবারো চুক্তি করে পত্রিকা প্রকাশের জন্য লোক খুঁজতে থাকে।অর্থাৎ পত্রিকাটি ভাড়া দিয়ে চালাতে আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি। ওইসময় আমাকে বেশ কয়েকবার আগের মতোএকই চুক্তিতে পত্রিকা প্রকাশের অনুরোধ করে। বার বার আমি ‘না’ বলি। পরিশেষে আমি স্থায়ী চুক্তি ও আমার জন্য সহনীয় ও পজিটিভ হয় এমন কিছু শর্ত তাঁকে জানাই। তিনি কিছুদিন চিন্তাভাবনা করে এবং আমার সব শর্ত মেনে নিয়ে তার পক্ষের কিছু শর্ত আমাকে জানায়। তাঁর শর্তগুলোও আমার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে করেই আমি মনস্থির করে মহান আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার শর্তগুলোতে রাজি আছি বলে জানাই। তখন তিনি তার ও আমার শর্তগুলো সমন্বয় করে হাতে লিখে দিতে বলেন এবং পূর্বের ক্রয়কৃত স্ট্যাম্পে তিনিই লিখে আনবেন বলে জানান। আমি নিজ হাতে এই চুক্তির শর্তগুলো লিখে দেই এরপর আমার ও তার সমন্বয় করে শর্তগুলো টাইপ কপি আমাকে এনে দেয় । এই কপিটি আমার কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক বন্ধু ও আইনজীবিকে দেখাই। তারা সকলেই সঠিক আছে বলে আমাকে জানায়। আমি টাইপ করা কপিটি ঠিক আছে বলার তিনদিন পর স্ট্যম্পে টাইপ করে কপিটি আমার অফিসে নিয়ে আসেন ও পড়ে দেখে তার স্বাক্ষরের পার্শ্বে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলে। আমার এসএসসি সনদে যেভাবে নাম আছে সেভাবে নাম লিখতে বলেন তিনিও আমাকে ডিসি অফিসের ফাইলের স্বাক্ষরটি দিয়েছেন বলে জানান। এই সময় ( ২৮/৪ /২০১৫ তারিখে) আমার অফিসে আসা ২ সাংবাদিক বন্ধুও স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দেয়। পরে তার স্ত্রী ও আপন ভাইকে স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষরও এনে দেবেন বলে স্ট্যাম্পটি নিয়ে যান।
এরপর প্রতিদিন তার সাথে আমার দেখা সাক্ষাত হতো। পত্রিকা নিয়ে নানান পরিকল্পনা করতাম। এরই মধ্যে তিনি পত্রিকা প্রকাশের প্রথম দিনে একটি অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব দেন ওইদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে পত্রিকাটি আমাকে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয় ও ছয় মাস নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমিও সেই মতে এগুতে থাকি। ওই প্রস্তাবটি আমার ভালোও লাগে।
পত্রিকা প্রথম সংখ্যা জুলাই এর প্রথম সপ্তাহ ২০১৫ সাল স্থির করি । প্রতিদিন প্রতিদিন পত্রিকা নিয়ে নানান পরিকল্পনা করতে থাকি। এরই মধ্যে ১১ মে ২০১৫ তারিখে জনাব জাফর হায়াত ঢাকায় অবস্থানকালে স্টোক করে মারা যান। আমি হতবাক হয়ে যাই এবং পত্রিকা প্রকাশের আশাও ছেড়ে দেই।
পরের বছর প্রিয় মানুষটি অন্তিম ইচ্ছা পুরনের জন্য ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে চুক্তি অনুসারে শর্ত মনে করে আমার উদ্যোগে বন্ধুমহল নিয়ে জামাল খান রীমা কমিউনিটি সেন্টার হলে স্মরণ সভার আয়োজন করি। ওই স্মরণ সভায় জাফর হায়াতের স্ত্রী (আফসানা জাফর)কেও আমি ফোনে দাওয়াত দেই। ওই সভায় আমি সভাপতিত্ব করি ও অন্যন্যাদের মধ্যে জাফর হায়াতের স্ত্রী আফসানা জাফর ও স্মরণ সভায় আলোচনা করে। ওই স্মরণ সভার পর জাফর হয়াতের স্ত্রী আফসানা জাফরের সাথে আমার প্রথম দেখাদেখি ও পরিচয় হয়।
পরিচিতি সূত্র ধরে মাঝ মাঝে ফোনে কথা হতো। একদিন আমাকে ও সাংবাদিক এম কে মোবিনকে জাফর হায়াতের স্ত্রী দাওয়াত দিয়ে তার বাসায় নিয়ে যান ।
এরপর তিনি পূর্ব বাংলা পত্রিকাটি আমাকে বের করার জন্য অনুরোধ করেন এবং তিনি কিছু টাকা দাবী করেন। আমি তাকে বললাম এটা অলাভজনক সৃজনশীর কাজ পত্রিকায় তেমন লাভ নেই। ওই সময় আমি এবং ফটিকছড়ি নিবাসী সাংবাদিক তারেকুল ইসলাম আমার অফিস ঠিকানায় সাপ্তাহিক চট্টগ্রাম পোস্ট বের করতাম। পরে পত্রিকাটি দৈনিকে রুপান্তরিত হয়।
ইতিমধ্যে আমার মধ্যস্থতায় জাফর হায়াতের স্ত্রীর সাথে আমার এক ঘনিষ্ট বড় ভাই মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহর সাথে বিয়ে হয়। ওই বিয়ের পর আজ পর্যন্ত তারা সুখে শান্তিতে আছেন। বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রী দুইজনই আমাকে পত্রিকাটি বের করার অনুরোধ করে। তখন তাদের কাছে পত্রিকা সংক্রান্ত কাগজপত্র আমাকে দিতে অনুরোধ করি ও জাফর হায়াতের স্ত্রী ও তার ও ভাইয়ের একটি সই লাগবে জানাই। তারা কাগজপত্র দিলে আমাদের স্বাক্ষরিত চুক্তিটি আমি খুঁজে পাই। তখন জাফর হায়াতের স্ত্রী আফসানা জাফরকে একটি স্বাক্ষর সই দিতে অনুরোধ করি। তখনো তিনি সই দেবার বদৌলতে টাকা দাবী করেন। তখন আমি আবারো চুক্তিনামটি কয়েকজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও আইনজীবিকে দেখাই। তারা আমাকে পরামর্শ দেন ও যুক্তি দেখান আগেও তিনি যে দুটো চুক্তি করে ছিলেন সেখানত স্বাক্ষী স্ত্রী নেই ও স্ত্রীকে স্বাক্ষী হতে হবে তার বাধ্যবাধকতা নেই। স্ত্রীর স্বাক্ষর না হলেও চলবে। তখন মাস কয়েক প্রস্তুতি নিয়ে পত্রিকা বের করি। ওই সময় আফসানা জাফরেই বর্তমান স্বামী জনাব হাবিবুল্লাহ পত্রিকা প্রকাশে আমাকে সহযোগিতা করার আস্বাস দেন কি পরিমানে লাভ হবে তা জানতে চান । আমি তখন বলি এটি অলাভজনক ও সৃজনশীল কাজ । তিনি ১টি মনিটর গিফট দিয়ে কিছুদিন পর তিনি মামলা মকদ্দমা হতে পারে এই আশংঙ্কার কথা বলে তিনি আর পত্রিকা প্রকাশের আগ্রহ দেখাননি। আমি একা কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করি এই সৃজনশীল পেশায় লেগে যায়। যা এখনো অবধি চালিয়ে যাচ্ছি। চুক্তিনামার সকল শর্ত মেনে চলেছি।
২০১৭ সাল হতে ‘২৪ সাল পর্যন্ত চালানোর পর পত্রিকাটির সুনাম পাঠকমহলে প্রশংসিত হবার পর হঠাৎ করে তিনি ১১/০৩/২৪ তারিখে হাবিবুল্লাহর স্ত্রী (পূর্বে জাফর হায়াতের স্ত্রী) আফসানা হাবিব একটি উকিল নোটিশ পাঠিয়ে আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেন। পূর্বে আমাকে দেয়া সকল কাগজপত্রগুলো ফেরত চান এবং আমি তার স্বাক্ষর ছাড়া পত্রিকা বের করছি বলে নানান জনকে বলতে থাকেন। পূর্বে পত্রিকা প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে এমন এক ব্যাক্তি তাজুল ইসলামকে বর্তমানে জাফর হায়াতের মৃত্যুর পূর্বের স্ত্রী আফসানা জাফর চুক্তি করার পায়তারা চালিয়ে আমার সুনাম, পত্রিকার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে চলেছেন।।
প্রসংগত প্রায় ৬৩ বছর বয়সে জাফর হায়াত ও আফসানা হাবিবের (৪৫) তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরও তারা নিঃসন্তান ছিলেন । ২য় বিয়ের পর এখনাে নিঃসন্তান রয়েছেন । তাদের সংসার জীবনের অনেক কথা আমাকে মাঝে মধ্যে জাফর হায়াত শেয়ার করতেন। চকবাজার খালপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। ঢাকায় তার এক ভাইও সপরিবারে থাকতেন । ঢাকায় অবস্থান কালে তিনি ওই ভাইয়ের বাসায় থাকতেন। কিন্তু বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী পরামর্শে ঢাকায় গেলে ভাইয়ের বাসার স্থলে হোটেলে থাকতে হতো । এতে মানষিক অশান্তিতে তিনি দুচিন্তা গ্রস্থ ছিলেন বলে আমাকে বার বার জানাতেন । ঢাকায় শেষবার অবস্থান কালে হোটেলেই তিনি মারা যান।