আর্থিক সংকটে ভবন নির্মাণ করতে পারছে না, দৈনন্দিন খরছ চালাতেও হিমছিম খাচ্ছে
চাই সরকারী – বেসরকারী সাহায্য ও সহযোগিতা, চাই দানবীরদের দৃষ্ঠি আকর্ষণ
এম.আলী হোসেন ও রানা সাত্তার
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে জেনারেল শিক্ষা ও আরবি শিক্ষা নিয়ে গড়ে ওঠা বোয়ালিয়া ইসলামিয়া বড় মাদ্রসা নামক একটি প্রাচীন ও পুরাতন শতবর্ষীয় মাদ্রসা রয়েছে। যার প্রতিষ্ঠা কাল ১৯০২ সালে অর্থাৎ এখন তার বয়স দাড়ালো ১২৪ বছর। ৭৫০ জন বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসাটি।এখানে রয়েছে এতিম বাচ্চারাও, যাদের পড়ালেখা,বই পত্র,খাওয়া,নাস্তার জন্য মাসিক একটি বড় অংকের খরচ বহন করতে হয় কতৃপক্ষের। কওমি মাদ্রসা বলে বৈষম্যর শিকার হয়ে সরকার বা দাতা সংস্থারাও সহযোগিতা করছেনা।পরিচালনা পরিষদ এলাকাবাসী নিয়ে খুব নাজুক অবস্থায় মানবতার মধ্য দিয়ে মাদ্রাসাটি চালিয়ে যাচ্ছে কতৃপক্ষ।
ঝুঁকিপূর্ণ মাদ্রাসাটি মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হলেও মাদ্রসা ভবনটি ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় । কিন্তু আজও মুল ভবনটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিতে পারছে না কতৃপক্ষ কারন আর্থিক সংকটে।পাচ্ছে না সরকারি কোনো অনুদান ও সহযোগিতা।এমনকি দেশী-বিদেশী কোনো সংস্থার সহযোগিতাও পাচ্ছেনা।এলাকার মানুষের দান,যাকাত,ফিতরা দিয়ে চলছে মাদ্রাসাটির খরচ। ভবনটির অনেক অংশ ধসে পড়েছে, ভবনের বিভিন্ন স্থানের বিম এবং পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান করছেন শিক্ষকেরা। ভবনটির বেহাল দশার কারণে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীরাও পাঠগ্রহণের সময় থাকেন আতঙ্কে।
অন্যদিকে,মাদ্রসাটির ঠিক পাশেই রয়েছে শতবর্ষের নিদর্শন বায়তুল নুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।যে মসজিদ ঠিক খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি পুনরায় নির্মানের জন্য ভেঙে ফেলা হয়।কিন্তু মসজিদ বিনির্মানে যে খরচ ধরা হয়েছে পুরাটাই নির্ভর করতে হচ্ছে মানুষের দান,অনুদান সহযোগিতার উপর। সরকারি কোনো অনুদান পাচ্ছে না এই মসজিদ ও মাদ্রাসাটি। ইতিমধ্যে মসজিদটির নির্মান কাজে অংশ নেয়ার আগ্রহীদের জন্য একটি বিকাশ নাম্বার ও একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে(বিকাশ-০১৮৫৭১৮৫৫৭৮), আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক,চাতরী চৌমুহনী ( ১৫৪১১২০০১৭১১৫) যারা এই মসজিদ বা মাদ্রসার কাজে অংশ নিতে ইচ্ছুক তারা দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে কমিটি জানান।
স্থানীয়রা জানান,আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নে একমাত্র শতবর্ষী মাদরাসা এটি। এই মাদরাসায় নাজেরা,নুরানী থেকে কিতাব বা গ্র্যাজুয়েশান ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশান পর্যন্ত লেখাপড়া হয়। লেখাপড়ার দিক থেকেও এগিয়ে আছে মাদরাসাটি। প্রতি বছর এই মাদ্রাসা থেকে শত শত হাফেজ হিফয শেষ করে পাস করে বেরিয়ে পৃথিবীব্যাপি কোরআনের আলো ছড়াতে বেরিয়ে পরছে।কিন্তু ভবনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে এটি যেকোনো সময় সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে পাঠাতে চিন্তা করেন।
মাদরাসা কমিটি জানান, মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার ১২৪ বছর পার হলেও তেমন কোন সংস্কার হয়নি। বর্তমানে মাদরাসাটিতে ৭৫০ জন শিক্ষার্থী আছে, পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল হয়ে প্রতি বছর। মাদরাসাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। শিক্ষকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন। মাদরাসাটির পরিত্যক্ত ভবনটি সংস্কার জরুরি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিশাল মাদরাসাটির বহু কক্ষবিশিষ্ট পরিত্যক্ত ভবনটিতে একটি রুম শিক্ষক মিলনায়তন । আর বাকি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ভবনটির প্রতিটি পিলারে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ভবনের সামনের অংশের বিম ফেটে গেছে। ভেতরের বিমগুলোর অবস্থাও করুণ। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য শ্রেণির পাঠকক্ষের অবস্থা আরও নাজুক।
স্থানীয় এক মুসুল্লি বলেন, সব সময় সরকারের উন্নয়ন সংস্কার থেকে আমরা বৈষম্য শিকার, ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ খসে পড়া ভবনেই চলছে পাঠ দান ভবন না থাকায় ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি বৃষ্টি দিনে ছাদের পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের বইপত্র গা ভিজে যায়, ঝড় বাতাস এলেই শিক্ষক সহ ছাত্র-ছাত্রীরা ভবনের বাইরে বেরিয়ে আসে।আতঙ্ক নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক ক্লাসে বসে থাকেন। সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে আমাদের দাবি মাদ্রাসা গরীব, দুস্থ মানুষের বাচ্চাদের দু’মুঠো ডাল-ভাত খাওয়ায় সহযোগিতা ও বাংলাদেশের অন্যন্য মাদ্রাসার মত অতি দ্রুত আমাদের একটি বহুতল ভবন আমাদের মাদ্রাসায় হলে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক মনোরম পরিবেশে শিক্ষা প্রদান ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে বলে মনে করেন।
উল্লেখ্য, এই মাদ্রাসায় ৭৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের এক দিনের খাওয়া খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা।মাঝে মাঝে এই খরচ চালাতে বড় হিমশিম পরতে হয় মাদ্রসা পরিচালনা কমিটির। ১২০ বছরের এই মাদ্রাসার যাবতীয় খরচ চালিয়ে এসেছে এলাকাবাসী ও প্রবাসী কিছু মানবিক মানুষ।পড়ালেখার মান ভালো হওয়ায় দিন দিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।